দুবলার চরের সূর্যাস্ত
top of page
Search

দুবলার চরের সূর্যাস্ত

লিখেছেন ফারজানা আফরোজ

 

দুপুরের লাঞ্চ সেরে তাড়াহুড়া লেগে গেল, খুব বেশি দেরি হয়ে গেলে সূর্যাস্ত দেখা মিস হয়ে যাবে। দুবলার চরের সৈকত থেকে সূর্যাস্ত দেখার ব্যাপারটাই অন্যরকম।


রীতিমতো রেডি হয়ে যখন ট্রলার এর কাছে গেলাম, এই সিনারিটা দেখে মনের মধ্যে ভয় ১০০ গুন বেড়ে গেল।


যারা ট্রলারে অলরেডি উঠে গিয়েছে তাদের সবাই লাইভ জ্যাকেট পরা এবং ট্রলার টা এমন ভাবে দুলছে, মনে হচ্ছে, যেকোন সময় পড়ে যেতে পারে।

সমুদ্রের এই উতাল পাতাল সিনারি দেখে আমাদের জালাল ভাই পুরাপুরি মনস্থির করে বসে আছেন, উনি আর যাবেনা দুবলার চর।এত রিকোয়েস্ট করা হলো, কিন্তু কোনভাবে উনি মনোবল জোগাড় করে ট্রলারে উঠতে পারলেন না।



কি আর করার!! জালাল ভাইকে জাহাজে রেখেই, আমরা লাইফ জ্যাকেট পড়ে আল্লাহর নাম নিয়ে রওনা দিলাম।

খুব বেশি সময় নেয়নি ট্রলার পাড়ে ভিড়তে, নেমেই দেখি চারদিকে শুটকি আর শুটকি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় দুর্গন্ধ নেই। একধারে বিশাল সমুদ্র আরেক ধারে বালি, এই পথটা ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা মিলল অসংখ্য জেলিফিশ এর। দেখতে পেলাম অনেক ধরনের মাছ পড়ে আছে চারিপাশে, তারা মাছও দেখেছি।


আমার ছেলে তো ভীষণ খুশি, কিছুক্ষণ পরপর বলে উঠছে"" তাপ্পি দেখো দেখো, জোলা ফিশ টার ফিশ ( স্টারফিশ)।


তবে একটা মজার বিষয় হচ্ছে পুরা দুবলার চরের মানুষজন আমার আর আয়ানের হাতের হ্যান্ডকাফ টা দেখে খুবই হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। কেউ বলছে এটা কারেন্টের জাল। কেউ বলছে মা হাতে শিকল পরিয়ে রেখেছে বাচ্চাটা টা বেশি ফাজিল বলে। একজন তো রীতিমতো আমাকে প্রশ্ন করে বসেছেন """ আপা এটাকি মেলা দাম? কইথে কিনছেন? এটা কি শট মারে?"



অনেক অনেক ফটোসেশন হলো, সবাই বস্তা ভরে শুটকি কিনলো।প্রত্যেকের বস্তা দেখে মনে হচ্ছে শুটকি কিনার কম্পিটিশনে নেমেছেন।

না কেনার কোন কারণ দেখছিলাম না, এত ফ্রেশ এবং কোন ধরনের প্রিজারভেটিভ ছাড়াই শুটকি গুলো তৈরি হচ্ছে। কক্সবাজারের শুঁটকির তুলনায় স্বাদেও ভিন্ন

দুর্ভাগ্যবশত ওখানে বসে সূর্যাস্ত দেখার যে পরিকল্পনা করে গিয়েছিলাম তা পূরণ হয়নি। বড়রা স্থির করেছেন আর বেশিক্ষণ দুবলার চরে অবস্থান করবেন না। তারা জাহাজে বসে সূর্যাস্ত দেখবেন।


মনটা একটু খারাপ হয়ে গিয়েছিল।জাহাজে উঠে সোজা ক্যান্টিন থেকে এক কাপ কফি নিয়ে লবিতে আসতেই হঠাৎ চোখ পরল আকাশে। এত সুন্দর একটা দৃশ্য সত্যিই ভুলার মত না। সারাক্ষণ মনে হয় সূর্য অস্ত যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রইলাম। এত সুন্দর করে ডুবে যাচ্ছে মনে হচ্ছে পুরো সমুদ্র সূর্যটাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলছে। হলুদ আভা তার সত্তা হারিয়ে লাল রঙের পরিণত হচ্ছে। সে এক অন্যরকম সৌন্দর্য ।


আজ রাতে একটা বারবিকিউ পার্টি আছে।দুবলার চর থেকে বকুল ভাই একেবারে তাজা কোরাল মাছ কিনে এনেছেন। মুরগির সাথে এটার বারবিকিউ হবে। অপেক্ষার পালা কমছে না, তারপরও ধৈর্য্য ধরে বসে আছি।


1 view
bottom of page