Jun 21, 2021

সুন্দরবনে শীপে বার-বি-কিউ

লিখেছেন ফারজানা আফরোজ


জম্পেশ বারবিকিউ চলছে। দক্ষ কারিগরের মত বারবিকিউ এর স্টিক গুলো নেড়েচেড়ে দেখছেন মাসুম ভাই। হাসিখুশি বেশ ভালো মনের একটা মানুষ।যতবারই বলছি মাসুম ভাই একটা পোজ দেন, ততবারই হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন ।

হিমশীতল একটা বাতাস, সমুদ্রের গর্জন,সাথে ধোয়া উঠানো বারবিকিউর ঘ্রাণ। সবকিছু মিলে পরিবেশটা সত্যিই অসাধারণ।

আমাদের রোজা মামীর কাঁধে দায়িত্ব পড়েছে কোরাল মাছের ভাগবাটোয়ারা করার।যেহেতু আমি মামীর দলেরই একজন লোক, সে ক্ষেত্রে আশা করতেই পারি একটু বেশি পাব।

দল ক্ষমতায় থাকলে যা হয় আর কি। যদিও অবশেষে আবির ভাই সব কিছু ভাগ বন্টন করে দিয়েছেন ।

হলরুমে নাচ গানের মাঝে হঠাৎ করে পুরো জাহাজের লাইট অফ করে দেওয়া হল। সবাই আমরা হতভম্ব ব্যাপারটা কি। লবিতে আসতেই দেখি, সুইমিং পুলের পানি মনের সুখে এদিকসেদিক দোল খাচ্ছে। বুঝতে বাকি নাই আমাদের জাহাজটা ও দুলছে, ক্যাপ্টেন এসে বলে গেলেন আমাদের জাহাজটা নদী এবং সমুদ্রের মোহনা বরাবর পার হচ্ছে। ৪৫ মিনিট সময় লাগবে সবাই যাতে ধৈর্য সহকারে একটু বসি। কোনরকম আলো জালানো যেন না হয়। যদি একটু ভুল হয় তাহলে জাহাজ যে কোন দিকে হারিয়ে যেতে পারে।

সেদিন রাতে বেশ গান-বাজনা হল। জিসান মামার কন্ঠে আমাকে উদ্দেশ্য করে ""অল্প বয়সে পিরিতি করিয়া হয়ে গেল জীবনের শেষ"" গানটা দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হল। আমিও সেই ফিল নিয়ে গানটা গাইলাম। মনে হল সত্যিই কি জীবনের শেষ!

এক কাপ কফি নিয়ে ছেলের হাত ধরে লবিতে গেলাম। অনেকদিন পর অন্ধকার আকাশে তারার দেখা পেলাম। মনে হচ্ছিল পুরো আকাশ জুড়ে তারাদের মেলা বসেছে।

সুদর্শন একটা ছেলে, প্রথম দিন থেকে ক্যামেরা হাতে সবকিছু ক্যাপচার করে চলছে। একদম শান্ত নিবিড় ভাবে, যাতে একটা দৃশ্যও বাদ না পড়ে।

প্রথমে ভেবেছিলাম নিজের জন্য। পড়ে বুঝতে পারলাম এত প্যাশন, এটা একমাত্র কাজকে ভালোবাসলেই সম্ভব। লবিতে পরিচয় হয়ে গেল, অনেক গল্প হয়ে গেল নিবিড়ের সাথে। ও একজন ভিডিও ব্লগার।ইউটিউব চ্যানেল আছে। অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে এবং অনেক ভিডিও পোস্ট দিয়েছে।

সেলিব্রেটিদের পাশে বসলে নিজেকে সেলিব্রেটি সেলিব্রেটি লাগে , এই ভাবটা কে ধরে রাখার জন্য তৎক্ষণাৎ একটা সেলফি তুলে নিলাম। যখন ও সফলতার শীর্ষে আহরণ করবে,তখনই হালকা-পাতলা ভাব নেওয়ার জন্য এই সেলফিটা আমার কাজে লাগবে।

পুরো সুন্দরবনের এই জার্নিটা নিবিড়ের ভিডিও দেখলে আরো বেশি সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।যারা বাঘ দেখা এবং কুমিরের স্লাইডিং নিয়ে এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন, আশাকরি ভ্লগ দেখে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।একদমই মিস করা চলবে না, আমি নিচেই ইউটিউব লিংকটা দিয়ে দিয়েছি।

লাইক & সাবস্ক্রাইব ।

গল্পের এক পর্যায়ে ছেলে বলল “তাপ্পি আজকে অনেক তারা খেলছে, চাঁদ কোথায়?”

আমার সাথে প্রতিরাতে বারান্দা দিয়ে চাঁদ তারা দেখার অভ্যাস আয়ানের হয়ে গিয়েছে। এইজন্য সেও ইনজয় করল ব্যাপারটা।মা ছেলে হাত ধরে হাঁটাহাটি করতে করতে বেসুরো গলায় গান গাইছিলাম মনের সুখে

""যেতে যেতে পথে, পূর্ণিমা রাতে, চাঁদ উঠেছিল গগনে...................."""""

    2
    0